ঈশ্বরদীতে চিকিৎসকের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যু, মরদেহ আটকিয়ে ২০ হাজার টাকা আদায়!
বিশেষ সংবাদদাতা।।
অপারেশন থিয়েটারে গাইনি বিশেষজ্ঞ ও পরে শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অবহেলায় এক নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। আর এই ঘটনায় মৃত নবজাতকের মরদেহ আটকিয়ে পরিবারের নিকট থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করে অ্যাম্বুল্যান্স চালককে দেয়া হয়েছে। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ মৃত নবজাতকের পরিবার ও স্বজনদের ম্যানেজ করে গত রবিবার রাতে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে মিমাংমা করে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
গত শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে রবিবার (৮ ডিসেম্বর) রাত নয়টা পর্যন্ত পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার হেলথ কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টারে এই ঘটনা ঘটে।
সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বিকেলে ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাউর হলে টক অব দ্যা টাউনে পরিণত হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঈশ্বরদী শহরের ভাটাপাড়া এলাকার মৃত সেকেন্দার আলী শাহ’র ছেলে আশিকুর রহমান আকাশের স্ত্রী মারিয়া খাতুন (২২) গর্ভবতি হলে হেলথ কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের মালিক গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ লতিফা সুলতানা নিকট চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রসব বেদনা উঠলে শুক্রবার সিজারের মাধ্যমে বাচ্চা প্রসবের জন্য হেলথ কেয়ারে ভর্তি করা হয় তাকে। সকালে আল্টাসনোগ্রাম করে বাচ্চা সুস্থ ও স্বাভাবিক রয়েছে বলে জানানো হয়। তবে সন্তানের ওজন বেড়ে যাওয়ায় দুপুরের মধ্যেই অপারেশন করাতে হবে বলে জানান ডাঃ লতিফা সুলতানা।
প্রসূতির পরিবার শুক্রবার দুপুরে সিজারের জন্য ডাঃ লতিফা সুলতানাকে অনুরোধ করলেও ডাক্তার সময়ক্ষেপণ করে সন্ধ্যার পর অপারেশন করে বাচ্চা প্রসব করান। তবে এক ঘন্টা পর্যন্ত নবজাতকের মুখ স্বজনদের দেখতে দেওয়া হয়নি। পরে অপারেশন থিয়েটার থেকে ডাঃ লতিফা সুলতানা ও তার স্বামী শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ রকিকুল ইসলাম রিপন নবজাতকের স্বজনদের জানান, অ্যাম্বুল্যান্স ডাকা হয়েছে, দ্রুত শিশুটিকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিতে হবে। এরপর অক্সিজেন ব্যবস্থাহীন অ্যাম্বুল্যান্সের মাধ্যমে শুধুমাত্র নবজাতককে রাজশাহী নেয়ার পথে বাঘায় মারা যায়। এতে নবজাতকের স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে অ্যাম্বুল্যান্সের গ্লাস ভেঙ্গে ফেলে।
মৃত নবজাতকের পরিবার সূত্র জানায়, মৃত শিশুকে দাফন কাজে বাধা দিয়ে হেলথ কেয়ারের ডাক্তারের সঙ্গে যোগসাজশ করে অ্যাম্বুল্যান্স চালক তাদের নিকট থেকে নগদ ২০ হাজার টাকা আদায় করেছেন।
বিষয়টি জানাজানি হলে তা ধামাচাপা দিতে ডাঃ লতিফা সুলতানা ও তার স্বামী ডাঃ রকিবুল ইসলাম রিপন তড়িঘড়ি করে তাদেরকে ক্লিনিকে ডেকে নিয়ে আলোচনা সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ বাবদ টাকা দিয়ে মিমাংসা করেন। তারপর প্রসূতিকে হেলথ কেয়ার থেকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে।
মৃত নবজাতকের বাবা আশিকুর রহমান আকাশ বলেন, চরম অবহেলা করে আমার ছেলেটাকে মেরে ফেলা হয়েছে। আর যেন কোন শিশু হেলথ কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের চিকিৎক লতিফা সুলতানা ও তার স্বামী ডাঃ রকিবুল ইসলাম রিপনের ভুল ও অপচিকিৎসায় মৃত্যুবরণ না করে।
এ ব্যাপারে গাইনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ লতিফা সুলতানার কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তার স্বামী শিশু চিকিৎসক ডাঃ রকিবুল ইসলাম রিপন বলেন, নবজাতকটি আমার ক্লিনিকে মারা যায়নি। শিশুটির হার্টের সমস্যা থাকায় রাজশাহী মেডিক্যালে পাঠানো হয়। পথিমধ্যে মারা গেছে। এজন্য আমাদের কোন দায়ভার নেই। তবে মৃত নবজাতকের স্বজনদের সঙ্গে কেন মিমাংসা করেছেন, এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মোবাইল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাবনার সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ শহীদুল্লাহ দেওয়ান বলেন, ঈশ্বরদীর হেলথ কেয়ার হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের ডাক্তারদের অবহেলায় নবজাতকের মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি। মৃত নবজাতকের পরিবারের কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগ করলে বা সংবাদ প্রকাশ করা হলে তদন্ত কমিটি করে বিষয়টি তদন্ত করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান।