ঢাকা অফিস।।
রাজধানীর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালের চিকিৎসাধীন দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার ঘটনা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ।
গতকাল শেরেবাংলা নগরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ইউএনওকে দেখতে গিয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনার পর থেকে পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা প্রকৃত কারণ এবং কারা জড়িত তা বের করতে অভিযান শুরু করেছে। ইতিমধ্যে এ ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে আটক করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাদের কাছ থেকে বেশকিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া গেছে।
আইজিপি বলেন, আমরা তদন্ত শুরু করেছি। তদন্তে এসব বিষয়গুলো অবশ্যই বেরিয়ে আসবে। যারা প্রকৃত অর্থেই দোষী তাদের গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখি করা হবে। তাদের কোনো পরিচয় বা গোষ্ঠী নেই। তারা অপরাধী। অপরাধী শনাক্ত করে আমরা তদন্ত শেষ করব।
এদিকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের শরীরের ডান পাশ অবশ ছাড়া সার্বিকভাবে সবকিছু প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে। তার পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে, পরিবারের সদস্য এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছেন তিনি। সব ঠিক থাকলে তার মাথার সেলাই আগামী শনিবার কাটা হতে পারে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন চিকিৎসকরা। তবে এতদিন পর্যন্ত তাকে হাসপাতালের হাই ডিফেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউত) রাখা হবে। গতকাল ইউএনও ওয়াহিদার শারীরিক অবস্থার বিষয়ে এসব কথা জানান ওই হাসপাতালের যুগ্ম পরিচালক অধ্যাপক ডা. বদরুল আলম।
তিনি বলেন, আগামী শনিবার ওয়াহিদার মাথার সেলাই কাটা না পর্যন্ত তাকে এচইডিইউতে রাখা হবে। আমরা আশা করছি, শনিবার তার মাথার সেলাই কাটতে পারবো। ওয়াহিদার শারীরিক অবস্থা ভালো রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার ডান পাশটা যে অবশ অবস্থায় ছিল, সেটা ওই রকমই আছে। এছাড়া সার্বিকভাবে সবকিছু প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে। তার পূর্ণ জ্ঞান রয়েছে, পরিবারের সদস্য এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলছেন। এছাড়াও ইউএনও ওয়াহিদাকে স্বাভাবিক খাবার দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান ওই চিকিৎসক।
হাসপাতালের নিউরো ট্রমা বিভাগের প্রধান ও ওয়াহিদার মেডিক্যাল বোর্ডের প্রধান ডা. মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন জানান, ওয়াহিদার ডান পাশে শক্তি নেই কিন্তু, বোধ আছে। চিমটি কেটে ব্যথা দিলে বুঝতে পারেন, টাচ করলে বুঝতে পারেন। কিন্তু হাতের কোন শক্তি নেই, হাত নাড়াতে পারেন না। অবস্থার উন্নতিতে ফিজিওথেরাপি চলছে। ফিজিওথেরাপি চলার পরে কতটুকু উন্নতি হয় সেটা সময় হলে বোঝা যাবে।
উল্লেখ্য, গত ২ সেপ্টেম্বর দিনগত রাতে ইউএনও ওয়াহিদার সরকারি বাসভবনের ভেন্টিলেটর ভেঙে বাসায় ঢুকে ওয়াহিদা ও তার বাবার ওপর হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে ইউএনও ও তার বাবাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে আহত করা হয়। পরে ইউএনওকে প্রথমে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (রমেক) নিয়ে ভর্তি করা হয়। এরপর তার শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য হেলিকপ্টারে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়। পরে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। তারপর ৩ সেপ্টেম্বর রাতে ছয় সদস্যের চিকিৎসক দল প্রায় দুই ঘন্টার চেষ্টায় ইউএনও ওয়াহিদার মাথায় জটিল অস্ত্রোপচার সম্পন্ন করা হয়। অস্ত্রোপচার শেষেই তাকে ৭২ ঘন্টার পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। এরপর হাই ডিফেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউত) স্থানান্তর করা হয় তাকে। বর্তমানে সেখানে চিকিৎসাধীন।
0 0